হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বাবা ইন্তিকালের কথা এবং মহানবী (সাঃ) এর শিশু বয়সে দুধ পান এর ঘটনা সমুহ - ইসলাম আমাদের ধর্ম

শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০২০

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বাবা ইন্তিকালের কথা এবং মহানবী (সাঃ) এর শিশু বয়সে দুধ পান এর ঘটনা সমুহ

এই পোস্টে আমরা জানবো হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বাবা ইন্তিকালের কথা এবং মহানবী (সাঃ) এর শিশু বয়সে দুধ পান এর ঘটনা সমুহ তাই পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ুন ঃ 


হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সম্মানিত পিতা আব্দুল্লাহ এর ইন্তিকালঃ


মহানবী (সাঃ) জন্ম গ্রহনের পূর্বে তার পিতা আব্দুল্লাহ ইন্তিকাল করেন। তার সম্মানিত পিতা আব্দুল্লাহ কে তদীয় পিতা আঃ মুত্তালিব মদীনা থেকে খেজুর নিয়ে আসার হুকুম দেন আব্দুল্লাহ তাকে গর্ভাবস্থায় রেখে মদিনায় চলে যান । এবং সেখানেই তিনি ইন্তিকাল করেন । আর হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) জন্ম হবার  আগেই তার মাথার উপর থেকে পিতৃছায়া হারান। -( সীরাতে মোগলতাই পৃঃ৭)
(একটি বর্ণনায় এইরূপ আছে যে, মহানবী (সাঃ) জন্মের ৭ মাস পর  তার পিতা ইন্তিকাল করেছেন। কিন্তু 'যাদুল মাআদ' গ্রন্থে ইবনে কাহিয়্যিম (রাহঃ) এই অভিমত কে দুর্বল করে আখ্যায়িত করেন।)


হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বাল্যকাল এবং দুধপানঃ

সর্বপ্রথম শিশু হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে তার সম্মানিত মাতা এবং কিছু দিন পর আবুলাহাবের বাদী সুওয়াইবা দুধ পান করান। এরপর হালীমা সা'দিয়া এই আল্লাহ তাআলার দেয়া দৌলতে ভাগী হন (মাগলতাঈ দ্রঃ)
আরবের সম্ভ্রান্ত গোত্রগুলোর মাঝে সাধারণত , এরকম প্রথা ছিল যে, সকলেই নিজ শিশুদের কে দুধ পান করানোর জন্য আশপাশের গ্রামে পাঠিয়ে দিত । এবং যার মাধ্যেমে শিশুদের শারীরিক সুস্থতা লাভ হত এবং বিশুদ্ধ  আরবী ভাষা শিখতে পারত । এই জন্য গ্রামের মহিলারা দুগ্ধ পোষ্য শিশু সংগ্রহের জন্য প্রায়ই শহরে আসত। হযরত হালিমা সা'দিয়া (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আমি সাদ সম্প্রদায়ের মহিলাদের সাথে দুগ্ধ পোষ্য শিশু আনার জন্য তায়েফ থেকে মক্কায় রওনা হই। সেই বৎসর দেশে দুর্ভিক্ষ ছিল। আমার কোলেও একটি বাচ্চা ছিল । কিন্তু (অভাব ও উপবাসের দরুন) আমার স্তনে এই পরিমাণ দুধ ছিলনা যা তার জন্য যথেষ্ট হত। রাত্রিভর সে ক্ষুদায় ছটফট করত এবং আমরা তার জন্য সারারাত জেগে কাটিয়ে দিতাম। আমাদের একটি উটনী ছিল কিন্তু তারও কোন দুধ ছিলনা। মক্কা সফরে যে লম্বাকান বিশিষ্ঠ উটনীর উপর সওয়াব হয়ে ছিলাম , সেটি এতই কম জোর ছিল যে, সকলের সাথে পালা যোগে চলতে পারত না। এ কারণে সঙ্গীগণও বিরক্ত বোধ করছিল । পরিশেষে কষ্টের সাথেই এই ভ্রমন সমাপ্ত হল।"

মক্কায় যখন পৌছল , তখন যে মহিলাগন শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) কে দেখতও শুনত যে, তিনি এতিম, তখন কেউ তাকে গ্রহন করত না। ( কারণ, তার পক্ষ থেকে বেশী পুরষ্কার ও সম্মানী পাওয়ার আসা ছিলনা।) এদিকে হালীমার ভাগ্যতারকা চমকাচ্ছিল। তাঁর দুধের কমতি তার জন্য রহমতে পরিনত হল। কেননা, দুধের কমতি দেখে কেউ তাকে বাচ্চা দিতে রাজি হয়নি।

হালীমা বলেন, 'আমি আমার পতিকে বললাম খালিহাতে ফিরে যাওয়াতে ভাল হচ্ছেনা । খালি হাতে যাওয়ার চেয়ে এই এতীম শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া অনেক ভাল। পতি এই প্রস্তাবে সম্মতি হলেন।" এবং তিনি এই এতিম রত্ন টিকে সাথে নিয়ে এলেন যার ফলে শুধু হালীমা ও আমেনার গৃহই নয় বরং পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে তাঁর জ্যোতির দ্বারা উজ্জল হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। খোদার রহমতে হালীমার ভাগ্য জেগে উঠল এবং দু'জাহানের সরদার মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার কোলে এসে পড়লেন। তাঁবুতে নিয়ে এসে  দুধ পান করতে বসার সাথে সাথে বরকত শুরু হয়ে গেল । স্তনে এই পরিমাণ দুধ নেমে এল যে, মহানবী (সাঃ) এবং তার দুধ ভাই তৃপ্তি সহকারে পান করলেন এবং ঘুমিয়ে পড়লেন। এ দিকে উটনীর প্রতি তাকিয়ে দেখলেন তার স্তন দুধে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে । আমার স্বামী উটনীর দুধ দোহন করলেন এবং আমরা সকলে তৃপ্তি সহকারে পান করলাম ও রাতভর আরামে কাটালাম। অনেক দিন পর প্রথম রাত এটাই ছিল যে, আমরা শান্তিতে ঘুমিয়ে ছিলাম। এবার আমার পতিও আমাকে বলতে লাগলেন যে,'হালীমা ! তুমিতো খুবই মোবারক বাচ্চা নিয়ে এলে। আমি বললাম আমারও এই বিশ্বাস যে, এই শিশুটি অত্যন্ত মোবারক হবে। আমরা যখন সেই উটনীর উপর সওয়ার হলাম আল্লাহ তাআলার কুদরতে লীলা দেখতে লাগলাম , এখন সেই দুর্বল উটনী টি এত দ্রুত চলতে লাগলো যে, কারো বাহন তার নিকট পৌছাতে পারছেনা। আমার সহগামী মহিলাগন আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগলেন যে, এটা কি সেই উটনী যার উপর তুমি সাওয়ার হয়ে এসেছিলে? যা হোক রাস্তা শেষ হয়ে গেল, আমরাও বাড়ি পৌঁছে গেলাম। সেখানে ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ চলছিল । দুগ্ধবতী  সমস্ত জন্তুরা দুগ্ধ শুন্য ছিল। আমি ঘরে প্রবেশ করলাম এবং আমার বকরী গুলির স্তন দুধে ভরে গেল। এখন থেকে আমার বকরী গুলো দুধে ভরপুর হয়ে আসতে লাগল, এবং অন্যরা তাদের জন্তু গুলা থেকে এক ফোঁটা দুধ ও পাচ্ছিল না। আমার কওমের লোকেরা তাদের রাখালগন কে বলতে লাগল, তোমরা ও তোমাদের জন্তুগুলিকে ঐ খানে ঘাস খাওয়াবে যেখানে হালীমা তার বকরীগুলকে ঘাস খাওয়ায়। কিন্তু এখানে তো চরণ ভুমি ও জঙ্গলের কোন চিহ্ন ছিলনা, বরং অন্যকোন অমুল্য রত্নের খাতিরে তা মনযুর হয়েছিল। ঐ বস্তু কোথায় পাবে? সুতরাং ঐ জায়গায় চরা স্বত্বেও তাদের জন্তুগুলি দুধ শূণ্য এবং আমার বকরী গুলি দুধে পরিপূর্ণ হয়ে বাড়ি ফিরত। এমনি ভাবে আমরা সবসময় মহানবী (সাঃ) এর বরকত সমুহ দেখতে ছিলাম। এমনকি ২ বৎসর পূর্ণ হয়ে গেল এবং আমি মহানবী (সাঃ) এর দুধ ছাড়িয়ে দিলাম।" (আস-সালিহাত)


 নতুন নতুন তথ্য পেতে আমদের ওয়েবসাইট টি হোম পেজ এ উপরে ফোলো বাটনে ক্লিক করুন এবং আপনাদের মতামত আমাদের কমেন্টের মাধ্যেমে জানান।  


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন